বছরের পর বছর গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা কিছু রহস্যের থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলেছেন। তবে এখনও এমন অনেক রহস্য রয়েছে, যার সমাধান বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত করতে পারেননি। মহাবিশ্বে প্রতিদিন নতুন কিছু ঘটছে, বিজ্ঞানের অগ্রগতি সত্ত্বেও সে সব ঘটনার কথা জানা আজও মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যাইহোক, মহাবিশ্বকে অসীম বলে মনে করা হয়, সুতরাং এটি স্পষ্ট যে সমগ্র মহাবিশ্বকে জানা মানুষের আজও হয়নি। কিছু রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায় আজীবন। তেমনি কিছু রহস্যময় তথ্য আমরা জানার চেষ্টা করবো এখন। যা জানলে অবাক হতে হয়।
আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির মাঝখানে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অত্যন্ত রহস্যময় কাঠামো রয়েছে, যাকে বলা হয় 'রিচ স্ট্রাকচার'। আবার অনেকে একে বলে রিচ্যাট স্ট্রাকচার। এর আর এক নাম 'আই অফ আফ্রিকা'। এটি বিশ্বাস করা হয় যে চোখের মতো এই আকৃতিটি এত বিশাল যে এটি মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। এই চিত্রটি কে তৈরি করেছে, কেন তৈরি করেছে, তা আজ পর্যন্ত রহস্যই রয়ে গিয়েছে। কিছু লোক এটিকে এলিয়েনদের দ্বারা তৈরি একটি চিত্র হিসাবে বিবেচনা করে। তবে বাস্তবে এটি বছরের পর বছর ধরে গোপন রয়েছে।
গিজার গ্রেট পিরামিড। এটি মিশরের সবচেয়ে রহস্যময় নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি। এই পিরামিড তৈরিতে ব্যবহৃত পাথরের ওজন ২ হাজার কেজি থেকে ৪৫ হাজার কেজি পর্যন্ত। এখন আশ্চর্যের বিষয় হল, এখনও একটি ক্রেন দিয়ে সর্বোচ্চ ২০ হাজার কেজি ওজন তোলা যায়, তাহলে হাজার বছর আগে ৪৫ হাজার কেজি ওজন কীভাবে তোলা হতো, তা এক রহস্য। এ ছাড়া এই পিরামিডে কতগুলো বেসমেন্ট আছে তা কেউ জানতে পারেনি।
আমেরিকায় একটি অত্যন্ত রহস্যময় জলপ্রপাত রয়েছে, যাকে বলা হয় 'ডেভিলস ক্যাটল'। অর্থাৎ 'শয়তানের চাকা'। প্রকৃতপক্ষে, কলড্রনের আকারে একটি ছোট পুল রয়েছে, যা রহস্যজনকভাবে নদীর অর্ধেক জল নিজের ভিতরে শুষে নেয়। এমনকি এই জল শেষ পর্যন্ত কোথায় যায় তাও বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করতে পারেননি। কথিত আছে যে জলপ্রপাতের ভিতরে কিছু জিনিস রাখা হয়েছিল জলের পথ খুঁজতে, কিন্তু কোথায় গেল, কেউ কিছু জানে না।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলায় এমনই একটি হ্রদ রয়েছে, যার ওপর দিয়ে সারাক্ষণ বজ্রপাত হয়। এখানে প্রতি ঘণ্টায় হাজার হাজার বার বজ্রপাত হয়। তাই এই স্থানটিকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তির ঘরও বলা হয়। একে বলা হয় ক্যাটাটাম্বো লাইটনিং এবং মারাকাইবোর বীকন এই নামেও পরিচিত। কেন এখানে সারাক্ষণ বজ্রপাত হয়, তা আজও রহস্যই রয়েছে। বিজ্ঞানীরাও এই রহস্যের কিনারা করতে পারেননি।
সবুজ রঙের ভাই-বোন
ঘটনা আজকের নয়। সেই দ্বাদশ শতাব্দীর। ইংল্যান্ডের উলপিট এলাকা। সেখানে হঠাতই একজোড়া ভাই বোনের এসে উদয় হল। অবাক হওয়ার বিষয় হল, এরা সবদিক থেকেই আলাদা। সাধারণ মানুষের মতো ছিল দেখতে ছিল বটে, তবে তাদের গায়ের রং ছিল অস্বাভাবিক সবুজ রঙের। দুই ভাই-বোনের কথাও কেউ বুঝত না। কারণ তাঁরা অজানা এক ভাষায় কথা বলত, পোশাকও ছিল অদ্ভূত। আর খাবার? খেত কেবল কাঁচা শিম। কিছুদিন পরই অবশ্য ভাইটি মারা যায়, বেঁচে থাকে বোন। মেয়েটিকে ধীরেধীরে ইংরেজি ভাষা শেখানো হয়। খাওয়ানো হয় অন্যান্য খাবারও। ধীরে-ধীরে মেয়েটির গায়ের সবুজ রং পরিবর্তন হতে শুরু করে। বাকিদের সে জানায়, দুই ভাই-বোন সেন্ট মার্টিন্স ল্যান্ড থেকে এসেছে। তার কথায়, সেন্ট মার্টিন্স হল মাটির নিচে থাকা এক রাজ্য, যেখানে সবার গায়ের রং সবুজ। অনেকেই তার কথা বিশ্বাস করেনি, বহু বিশেষজ্ঞও এই ভাই-বোনের পুরনো জীবন সম্বন্ধে খোঁজ চালিয়েছিলেন, কিন্তু কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেকেই আবার তাদের ভিনগ্রহের প্রাণী বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু রহস্যের কোনও সমাধান হয়নি।
হঠাৎ শুরু নাচ, তারপর মহামারী
১৫১৮ সাল, জুলাই মাস। ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গে মিসেস ত্রোফফেয়া নামের এক নারী হঠাৎ নাচতে শুরু করেন। তারপর সেখানে উপস্থিত সকলেই নাচতে শুরু করেন। কিছুতেই তাঁদের নাচ থামছিল না। এক সপ্তাহ পর আরও বহু মানুষ সেই নাচের সঙ্গে যোগ দেয়। এক মাস পর শত-শত মানুষ সেই অবিরাম নাচে যোগ দেয়। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন কেউ-কেউ। বাকিরা ফের নাচতে শুরু করেছেন। শহরের তৎকালীন শাসকরা ভাবলেন, এ ভাবে অবিরত নাচতে দিলে নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে নাচ থেমে যাবে সকলের। তাই তাঁরা শহরের টাউনহলে সমস্ত মানুষের নাচার ব্যবস্থা করে দিলেন। যাদের মধ্যে ক্লান্তি, হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপে প্রাণ হারায় প্রায় ৪০০ জন মানুষ। মাসের পর মাস অবিরাম নাচতে থাকা কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু কেন শুরু হয়েছিল সেই নাচ, আর পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। যদিও অনেকে দাবি করেন, বহু দিন ধরে অন্ধকার ও বদ্ধ ঘরে জল আর পাঁউরুটি খাইয়ে রাখার পর বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয় কিছু ব্যক্তিকে। তাঁদের মধ্যেই এই নাচের ঝোঁক দেখা যায়।
'দ্য হাম'- কিসের আওয়াজ ছিল?
১৯৬০ সাল নাগাদ এই ঘটনা। বিশেষত কানাডা, নিউ ম্যাক্সিকো, স্কটল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনেকেই এক অদ্ভূত শব্দ শুনতে শুরু করেন। অনেকটা যেন গাড়ির ইঞ্জিন চলার মতো শব্দ। এমন সে শব্দ, কানে তুলো গুঁজে রাখলেও শোনা যেত, কিন্তু সব মানুষ সেই আওয়াজ শুনতে পেতেন না। শব্দটির নামকরণ করা হয় দ্য হাম। জানা যায়, শতকরা মাত্র ২ ভাগ মানুষ 'হাম' শুনতে পেতেন। সাধারণত বাড়ির ভিতরে থাকার সময় এবং গভীর রাতে হামের আওয়াজ আরও জোরে শোনা যেত বলে জানিয়েছেন সেই সব মানুষরা। হামের কারণে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কিংবা অতিপ্রাকৃত ব্যখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বিস্তর। এমনকী পাথরে পরিণত হওয়া হিপ্পিদের কান্না, জনগণের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে সরকারের কূটকৌশল, মাটির নিচে থাকা ভিনগ্রহীদের যান UFO-এর ইঞ্জিনের শব্দ বলেও অভিহিত করা হয় 'হাম'কে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই শব্দের কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২৩৯ জন মানুষ, একটা বিমান..কোথায় গেল
২০১৪ সাল প্রায় সকলেরই মনে থাকার কথা। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০। ৮ মার্চ, ২০১৪। মালয়েশিয়া থেকে বেজিং যাচ্ছিল বিমানটি। ছিলেন ২২৭ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু। বিমানের ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে চালকের শেষ ভয়েস কানেকশন ঘটে টেক অফের এক ঘণ্টা পর এবং তারপরই রাডার থেকে নিখোঁজ হয় কয়েক মিনিটের কম সময়ের মধ্যে। মালয়েশিয়ার সামরিক রাডারটি প্রায় এক ঘণ্টার পর বিমানটি ট্র্যাক করে যখন আন্দামান সাগর পর্যন্ত রাডারের মধ্যে ছিল বিমানটি। অথচ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও সংকটের সংকেত, খারাপ আবহাওয়ার সতর্কবাণী বা প্রযুক্তিগত কোন সমস্যার কথা বলাই হয়নি। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ভারত মহাসাগরেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এই বিমানটি। সেই অনুযায়ী দীর্ঘ অনুসন্ধান চালানো হয়। কিন্তু বিমানের সামান্য কোনও ধ্বংসাবশেষও পাওয়া যায়নি। তাহলে কোথায় গেল বিমানটি? আজও তা জানা যায়নি।