পবিত্র কোরআনে বর্ণিত প্রভাবশালী একজন নবী হজরত সুলাইমান (আ.)। মহান আল্লাহ তাঁকে কিছু বিশেষ মুজেজা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো তিনি রানি বিলকিসের আগমনের খবর পেয়ে মুহূর্তে তাঁর সিংহাসনটি নিজের রাজদরবারে হাজির করিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে বিস্ময়কর এই ঘটনার বিবরণ আছে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুলাইমান আরো বলল, হে আমার পারিষদবর্গ! তারা আমার কাছে এসে আত্মসমর্পণ করার আগে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারবে? এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার আগে আমি ওটা আপনার কাছে এনে দেব এবং এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই ক্ষমতাবান, বিশ্বস্ত। কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি ওটা আপনাকে এনে দেব। সুলাইমান যখন ওটা সামনে রক্ষিত অবস্থায় দেখল তখন সে বলল, এটা আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ; যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা করে তার নিজের কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ হয় সে জেনে রাখুক যে আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মহানুভব।’ (সুরা নামল, আয়াত : ৩৮-৪০)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, সেদিন সুলাইমান (আ.)-এর এক সাহাবি, যিনি সেই ধর্মের বিজ্ঞ আলেম ছিলেন, তিনি মুহূর্তে সেই সিংহাসন এনে দেন। পবিত্র কোরআনে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইতিহাসের বিভিন্ন কিতাবে এই ঘটনার বিবরণ এবং সেই সুলাইমান (আ.)-এর আস্থাভাজন সাহাবির নাম পাওয়া যায়। পাশাপাশি সুলাইমান (আ.) কেন সেদিন জিনের মাধ্যমে সিংহাসন না আনিয়ে একজন মানুষের মাধ্যমে আনিয়েছিলেন, তার ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়। তাফসিরবিদরা বলেন, যে ব্যক্তি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন বলেছে, তাঁর কাছে কিতাবের ইলম ছিল, তাঁর নাম হলো আসিফ ইবনে বারখিয়া।
তিনি ছিলেন হজরত সুলাইমান (আ.)-এর একান্ত আস্থাভাজন একজন। শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এটাই বর্ণিত। কিছু তাফসিরবিদ অন্য নামও বলেছেন। তবে বেশির ভাগ তাফসিরবেত্তার দৃষ্টিতে প্রথম অভিমতটিই অগ্রগণ্য। যা হোক, কাতাদাহ ও মুজাহিদ (রহ.)-এর মতে, সেই ব্যক্তি ছিলেন একজন মানুষ। তিনি ইসমে আজম জানতেন। হজরত সিদ্দিকে আকবর (রা.) যেমন নবীজি (সা.)-এর একান্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন, তেমনি ওই লোকও সুলাইমান (আ.)-এর একান্ত আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সুলাইমান (আ.)-এর সাহচর্যে ধন্য হয়ে তিনি তাওরাত, জাবুরসহ আল্লাহর নাম ও গুণাবলি সম্পর্কিত বিভিন্ন নিগূঢ় জ্ঞান ও রহস্যের গভীর জ্ঞানী হতে পেরেছিলেন। এ কারণেই যখন অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী জনৈক দৈত্য-জিন সাবার সিংহাসন এনে দেওয়ার দাবি করল, যদিও উদ্দেশ্য পূরণের ক্ষেত্রে তার বেঁধে দেওয়া সময় যথেষ্ট ছিল, কিন্তু সুলাইমান (আ.)-এর হৃদয়ে এই বাসনা ছিল যে উল্লিখিত বিশেষ পদক্ষেপটি কোনো দৈত্য-জিনের মাধ্যমে নিষ্পন্ন না হয়ে আল্লাহর কোনো বিশেষ বান্দার হাতে সম্পন্ন হওয়া উচিত, যাতে তাঁর নবীসুলভ দৃষ্টিনিক্ষেপের মাধ্যমে সেটি একটি মুজেজা ও নিদর্শন হয়ে সাবার সম্রাজ্ঞীর সামনে উপস্থিত হয়। আসিফ সুলাইমান (আ.)-এর সেই আন্তরিক বাসনার কথা বুঝতে পেরে তত্ক্ষণাৎ নিজেকে পেশ করেন এবং সেই দৈত্য-জিনের বেঁধে দেওয়া সময়ের চেয়েও অনেক অল্প সময়ের ভেতর সেটি উপস্থিত করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। কেননা তাঁর বিশ্বাস ছিল যে সুলাইমান (আ.)-এর বরকতময় দৃষ্টিনিক্ষেপ সেই মুজেজাকে সত্য করে দেখাবে। আর যেহেতু প্রকৃতপক্ষে মুজেজা হয়ে থাকে খোদ আল্লাহর নিজের কর্ম, যা তিনি কোনো নবীর মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন তখন সুলাইমান (আ.) তাঁর নবুয়তের সত্যায়ন ও রিসালাতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের উল্লিখিত নিদর্শন দেখতে পেয়ে নিচের শব্দে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন, ‘হা-জা মিন ফাদলে রব্বি’, অর্থাৎ যা কিছু ঘটেছে, তার মধ্যে আমার বা আসিফের কোনো চেষ্টা বা শক্তির দখল নেই। বরং এটি এককভাবে মহান আল্লাহর দান, যিনি উল্লিখিত ঘটনাটি ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। (কাসাসুল কোরআন : ৬/৫৬-৫৯ অবলম্বনে)